প্রতিক্ষন সংবাদ: কোটা সংস্কার ও পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হওয়া ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো চিকিৎসকদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন (সনদ) বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। একই সঙ্গে বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সব সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকদের অপসারণের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থবিরতা ও ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুর্নবাসন এবং চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানির প্রতিবাদে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ। এ সময় তিনি বলেন, চিকিৎসকরা এ দেশের সচেতন নাগরিক। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের আত্মত্যাগ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগ যেমন আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছিল। তেমনি এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ ও মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। যার ফলে ডা. সজীবসহ একাধিক চিকিৎসক শহিদ হন।হারুন আল রশীদ বলেন, আন্দোলন চলাকালীন আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির, লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) ডা. রোবেদ আমীন, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুনুর রশিদ, লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম মুন্না, লাইন ডিরেক্টর ডা. সোহেল মাহমুদ, উপপরিচালক ডা. মোবারক হোসেন দিগন্ত, নিপসমের পরিচালক ডা. সামিউল ইসলাম সাদিসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য পরিচালক, লাইন ডিরেক্টর, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা সরকারি হাসপাতালে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এমনকি বিভিন্ন হাসপাতালে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করেছে। এমনকি নিহত ছাত্র-জনতার লাশের সংখ্যা গোপন করেছে এবং ছাত্র-জনতার লাশগুলোকে সরকারকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ড্যাবের চিকিৎসকরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আহত ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে। ফলে তারা বদলি, শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হয়।তিনি আরও বলেন, ৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সব নাগরিকের মতো চিকিৎসক সমাজ আমরা আশা করেছিলাম বৈষম্যবিরোধী যে চিন্তা নিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, তার আলোকে বৈষম্যহীন নতুন স্বাস্থ্যব্যবস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের শুরুতেই আমরা দেখলাম ফ্যাসিবাদী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী বিগত সরকারের সুবিধাভোগী লোকদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নিপসমের পরিচালক, আইপিএইচের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। আমরা স্বাভাবিকভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।এ সময় ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ড্যাবের চিকিৎসকসহ ভিন্নমত পোষণকারী সব চিকিৎসক কর্মকর্তারাই জুলুম, নির্যাতন, পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলি হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অনেকের চাকরিচ্যুতি হয়েছেন, নির্যাতনের কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তার পরও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ড্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ড্যাব এই আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন প্রদান করে এবং ড্যাবের চিকিৎসকরা বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করেছে।
Leave a Reply